খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ পৌষ, ১৪৩১ | ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তামিম ইকবালের অবসর ঘোষণা
  বছরের প্রথম দশ দিনে হাসপাতালে ৫২৮ ডেঙ্গু রোগী, মৃত্যু ৩
অর্থ পাচারের অভিযোগ

মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়ে প্রত্যাখ্যাত তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যা

গেজেট ডেস্ক

ইউরোপের দেশ মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক ও তার মেয়ে বুশরা সিদ্দিক বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবামাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমস। দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ থাকায় দুইবার চেয়েও শাহীন সিদ্দিকের নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল মাল্টার একটি অভিবাসন সংস্থা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকীর চাচি শাহীন সিদ্দিক ২০১৩ সালে মাল্টার নাগরিকত্ব-বিনিয়োগ প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স নামে একটি সংস্থা শাহীন সিদ্দিকের আবেদন ফিরিয়ে দেয়। এই সংস্থাটি সে সময় বিদেশি নাগরিকদের মাল্টার নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে কাজ করত।

হাতে থাকা নথির বরাতে ফিন্যানশিয়াল টাইমস জানায়, শাহীন সিদ্দিক ঢাকায় ‘প্রচ্ছায়া’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে সরকারি জমি দখলের’ অভিযোগ ছিল।

শাহীন সিদ্দিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী। তারিক আহমেদ সিদ্দিক ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত অক্টোবরে তারিক ও তার স্ত্রী শাহীনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। শাহীন সিদ্দিক ২০১৩ ও ২০১৫ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। দ্বিতীয়বার তিনি তার মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের জন্যও আবেদন করেন।

বুশরা সিদ্দিক টিউলিপ সিদ্দিকের আপন চাচাতো বোন। দ্বিতীয়বার আবেদনে তাকে ইংল্যান্ডের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি লন্ডনে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছিলেন। বুশরা ‘প্রচ্ছায়া’-এর পরিচালক হিসেবেও কাজ করতেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় শাহীনের করা প্রথম নাগরিকত্ব আবেদন ২০১৩ সালে সরাসরি বাতিল হয়ে যায়। কারণ ওই সময় গণমাধ্যমে প্রচ্ছায়ার বিরুদ্ধে ‘মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষ’ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

২০১২ সালে ‘প্রচ্ছায়া’ নামের সংস্থার নামে শাহীন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঢাকায় মূল্যবান জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। ২০১৬ সালে তিনি এসব জমি বিক্রি করে দেন। অভিযোগ আছে, তিনি তার স্বামী তারিক সিদ্দিকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব জমি দখল করেন এবং সুযোগ বুঝে বিক্রি করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

শাহীন সিদ্দিকের আবেদন বাতিল করার বিষয়ে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স জানায়, তার নেতৃত্বাধীন প্রচ্ছায়া নামক একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকায় মূল্যবান জমি দখল করে।

তবে দ্বিতীয়বার ২০১৫ সালের আবেদন করার সময় শাহীন প্রচ্ছায়ার কথা গোপন করে নিজেকে ‘দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড’–এর মালিক বলে উল্লেখ করেন। এরপর হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের একজন কর্মচারী এক ই-মেইলে জানান, মাল্টা কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরো তথ্য চাচ্ছে।

২০১৫ সালের মার্চে শাহীন সিদ্দিক তার মেয়ের জন্য মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদন করেন। যৌথ আবেদনের নথি অনুযায়ী, শাহীন সিদ্দিকের মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের খরচ ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার ইউরো এবং তার মেয়ের জন্য ২৫ হাজার ইউরো। পাশাপাশি, হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সকে ৭০ হাজার পাউন্ড ফি দিতে হতো।

ফিন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় আবেদনে শাহীন সিদ্দিক তার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য জমা দেন। তার ওই অ্যাকাউন্টে তখন ২৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার ছিল। যা আবেদনের মাত্র দুই মাস আগে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস সম্পর্কে নথিতে কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের মুদ্রা বিধি অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি তার ব্যাংক হিসাব থেকে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারেন না।’

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!